পেঁপে

পেপেঁর পরিচিতি

 পেঁপে বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফল। সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। পেঁপে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ওষুধি গুনসম্পন্ন। বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, নাটোর, নরসিংদী, খুলনা যশোরে বেশি পেঁপে উৎপাদিত হয়। বর্তমানে প্রায় হাজার হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন প্রায় ৪০ হাজার টন কিন্তু তা আমাদের চাহিদার মাত্র / অংশ পূরণ করে।
তুলনামুলকভাবে পাকা পেঁপে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পুষ্টিমানের দিক থেকে উন্নত। আমের পরই ক্যারোটিন বা ভিটামিন এর প্রধান উৎস হল পাকা পেঁপে। এছাড়া ক্যালসিয়াম খনিজ লবন প্রচুর পরিমানে থাকে। কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামন হজমকারী দ্রব্য থাকে যা রোগীর পথ্য। কাঁচা পেঁপেতে বেশি আয়রন থাকে।
পেঁপে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার যেমন হালুয়া, পায়েশ, চাটনি, আচার, স্যুপ সালাদ ইত্যাদি তৈরী করা যায়

জলবায়ু মাটি

জলবায়ু মাটি
উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়ায় পেঁপে ভাল জন্মে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পেঁপে সর্বত্রই লাভজনক ভাবে চাষ করা যেতে পারে। পানি দাঁড়াতে পারেনা এমন উর্বর জমি পেঁপের জন্য নির্বাচন করতে হয়

পেপেঁর জাত

পেঁপের জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শাহী পেঁপে (বারি পেঁপে-) নামে একটি পেঁপের জাত ১৯৯২ সালে উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ওয়াশিংটন, হানিডিউ, রাঁচি, ইত্যাদি জাতের চাষ হয়ে থাকে। পুষাজায়েন্ট, পুষা ম্যাজেষ্টি, সলো ইত্যাদি জাতগুলো উল্লেখযোগ্য

পেপেঁর জাত

পেঁপের জাত


বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট শাহী পেঁপে (বারি পেঁপে-) নামে একটি পেঁপের জাত ১৯৯২ সালে উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ওয়াশিংটন, হানিডিউ, রাঁচি, ইত্যাদি জাতের চাষ হয়ে থাকে। পুষাজায়েন্ট, পুষা ম্যাজেষ্টি, সলো ইত্যাদি জাতগুলো উল্লেখযোগ্য

বংশ বিস্তার

বংশ বিস্তার
সারা বিশ্বে পেঁপের বংশবিস্তার বীজ দ্বারাই হয়। বীজের গায়ে যে পিচ্ছিল পদার্থ ( Aril) থাকে তা অঙ্কুরোদগম রোধ করে। সুতরাং পাকা ফল থেকে বীজ সংগ্রহের পর ছাইয়ের সাথে মিশিয়ে পাটের বস্তার উপর ঘষে পানিতে ধুয়ে নিলে পিচ্ছিল পদার্থ চলে যায়। এর পরপরই বীজ রোপণ করলে দুসপ্তাহের মধ্যে চারা বের হয়। বীজ পরিষ্কার করার পর ভালভাবে শুকিয়ে নিচ্ছিদ্র পাত্রে (যাতে বাতাস ঢুকতে পারে না) সংরক্ষণ করলে অনেক বছর ধরে বীজ ভাল থাকে। সংরক্ষণ করা বীজের অংকুরোদগম হতে দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় নেয়। বীজতলায় বীজ না ফেলে সরাসরি ছোট ছোট পলিব্যাগে রোপণ করা হয়। প্রতি পলিব্যাগে - টি বীজ ফেলা  হয় এবং বীজ গজানোর পর টি চারাকে বাড়তে দিতে হয়। বীজ তলায় চারা উৎপাদনের বেলায় ১০-১৫ সে.মি উঁচু x মি. আকারের বীজতলা তৈরী করতে হয়। বীজ তলার মাটির মিশ্রণ হবে এক-তৃতীয়াংশ জৈব সার, এক-তৃতীয়াংশ বালি এবং এক-তৃতীয়াংশ মাটি। এর সাথে ৫০০ গ্রাম টিএসপি সার মিশালে ভাল হয়। এরকম বীজতলায় সে.মি মাটির গভীরে বীজ ফেলার পর ঝরনা দিয়ে পানি দিতে হয়।  চারা না গজানো পর্যন্ত বীজতলা ১৫ সে.মি উঁচু করে খড় দিয়ে ঢেকে দেয়া ভাল। - সপ্তাহের মধ্যে চারা বের হয়। বীজ বপনের পর ৫০-৬০ দিনের বয়সের চারা জমিতে রোপণের উপযুক্ত হয়। সাধারণত জুন - জুলাই এবং অক্টোবর - নভেম্বর মাস পেঁপের চারা উৎপাদন সময়। এক হেক্টর জমিতে রোপণের জন্য প্রায় ২০০ গ্রামে বীজের প্রয়োজন হয়       

জমি তৈরি

জমি তৈরি
জমি ভালভাবে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে সমতল করতে হবে পানি সরে যাওয়ার জন্য নালা রাখতে হবে যাতে করে জমি সুনিস্কাশিত হয়

রোপণ সময়

রোপণ সময়
বছরের যে কোন সময় পেঁপে রোপণ করা যায় অথবা সেচের সুবিধা থাকলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর অথবা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারী মাসে রোপণ করা যায়। নচেৎ মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হলে মে মাসে  োপণ করা উত্তম

চারা রোপণ পদ্ধতি

চারা রোপণ পদ্ধতি  
পেঁপের জন্য প্রচুর সূর্যের আলো প্রয়োজন। জন্য x মি. দূরত্বে কাঠি পুঁতে রোপণের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। তারপর কাঠিটিকে কেন্দ্র করে ৬০ x ৬০ সে.মি আকারের ৬০ সে.মি গভীর গর্ত তৈরি করে গর্তে সার মাটি মিশিয়ে চারা রোপণের উপযুক্ত করতে হবে। প্রতি গর্তে তিনটি করে চারা ২০ সে. মি দূরত্বে ত্রিভুজাকারে  োপণ করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ৭৫০০ টি চারার প্রয়োজন

সার প্রয়োগ

সার প্রয়োগ

সারের নাম

পরিমাণ

 (গাছ প্রতি

  গর্তে দেয় 

পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়    

  নতুন পাতা আসলে       

  ফুল আসলে   

  ১ম কিস্তি 

 ২য় কিস্তি

৩য় কিস্তি

  ১ম কিস্তি 

২য় কিস্তি 

 ৩য় কিস্তি

গোবর

  ১২-১৬ কেজি ( কেজি শেষ চাষে)

    কেজি

 -

 -

 -

 -

 -

 -

ইউরিয়া 

 ৪৫০-৫৫০ গ্রাম

 -

 ৫০ গ্রাম 

 ৫০ গ্রাম 

 ৫০ গ্রাম 

 ১০০ গ্রাম 

 ১০০ গ্রাম 

 ১০০ গ্রাম 

 টি এসপি

 ৪৫০-৫৫০ গ্রাম

 সব   

 -

 -

 -

 -

 -

 -

এম পি

 ৪৫০-৫৫০ গ্রাম

 -

 ৫০ গ্রাম 

 ৫০ গ্রাম 

 ৫০ গ্রাম 

 ১০০ গ্রাম 

 ১০০ গ্রাম 

 ১০০ গ্রাম 

 জিপসাম

 ২৪৫-২৫০ গ্রাম

 সব   

 -

 -

 -

 -

 -

 -

 বোরাক্র 

  ২০-৩০গ্রাম

 সব   

 -

 -

 -

 -

 -

 -

 জিংক     সালফেট 

   ১৫-২০ গ্রাম 

 সব   

 -

 -

 -

 -

 -

 -

*মাটির উর্বরতা ভেদে সার তার পরিমাণ কম বেশী হতে পা

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

অন্তর্বর্তী কালীন পরিচর্যা
পেঁপে বাগান আগাছামুক্ত রাখতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ১৫-২০ দিন পরপর সেচ দিতে হয়। মাটি মাঝে মাঝে হালকা কুপিয়ে দেয়া ভাল।  সময় প্রতি গর্তে একটি করে স্ত্রী গাছ রেখে আর সব গাছ সে স্ত্রী হোক বা পুরুষ হোক তুলে ফেলতে হবে। তবে প্রতি ২০টি গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখতে হয় যাতে পরাগায়ণে সুবিধা হয়

ফলের যত্ন

ফলের যত্ন
পেঁপে গাছের প্রতি পর্বে (Node) ফল আসে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিপর্বে একটির পরিবর্তে এক সাথে বেশ টি ফল আসে এবং এগুলো যথাযথ বাড়তে পারে না। এসব ক্ষেত্রে ছোট অবস্থাতেই প্রতিপর্বে দুএকটি ফল রেখে বাকি সব ফল ছিড়ে ফেলতে হয়

পোকামাকড় রোগবালাই

পোকামাকড় রোগবালাই দমন
 
পেঁপের তেমন কোন ক্ষতিকর পোকা মাকড় নেই। রোগবালাই এর  মধ্যে ঢলে পড়া রোগটি প্রধান।   রোগে  প্রচুর  চারা গাছ মারা যায়। তাছাড়া   রোগের  জীবাণুর  আক্রমণে বর্ষা মৌসুমে কান্ড পঁচা রোগ  হয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ
.গাছের গোড়ার পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা রাখতে হবে।
. রেডোমিল এমজেড -৭২ প্রতি  লিটার পানিতে গ্রাম হারে মিশিয়ে  ৭দিন পর পর গাছের  গোড়ার চারি পার্শ্বের মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
 
পাউডারী মিলডিউ
রোগে পাতার উপর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ফুলের গায়ে ধুসর বা সাদা পাউডারের আবরণ পড়ে। রোগে আক্রমনের কারনে ফলন কমে যায়।
প্রতিকার:
১। আক্রান্ত গাছের মরা ডাল পাতা পুড়ে ফেলতে হবে।
২। প্রতি লিটার পানিতে গ্রাম হারে থিয়োভিট বা ওয়েটেবল সালফার ৩০০ গ্রাম প্রতি ১০০ লিটার পানিতে বা গ্রাম ব্যাভিস্টিন মিশিয়ে ১৫ দিন অন- থেকে বার সেপ্র করে রোগ দমন করা যায়।

কান্ড পঁচা রোগ
রোগ হলে গাছের গোড়ায় বাদামি বর্ণের ভেজা দাগের সৃষ্টি হয় এর ফলে আক্রান- চারা গাছ ঢলে পড়ে এবং মরে যায়।
প্রতিকার:
১। আক্রান্ত চারা গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
২। রিডোমিল এমজেড-৭২ . মি.লি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে ছিটিয়ে দিলে সুফল পাওয়া যায়।

মোজাইক রোগ
রোগ হলে আক্রান্ত গাছের পাতায় সবুজ হলুদ রংয়ের দাগ দেখা যায়। পাতা খর্বাকৃতির আকারে ছোট হয়। জাব পোকা রোগ ছড়িয়ে থাকে।
প্রতিকার:
১।  আক্রান্ত গাছ উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে।
২। বাহক পোকা দমনের জন্য মেলাথিয়ন প্রতি লিটার পানিতে মি.লি হারে মিশিয়ে - দিন পর পর ষেপ্র করতে হবে।
৩। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছ প্রতি ১৫ গ্রাম জিংক সালফেট প্রয়োগ করলে সমস্যা দুরীভূত হয়।
এ্যানথ্রাকনোজ
ফলের বোটার দিকে গোলাকার দাগ দেখা যায় যা কালো হয়ে পচন ধরে। ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে গ্রাম মিশিয়ে ষেপ্র করে রোগ দমনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে

ফল সংগ্রহ

ফল সংগ্রহ
ফল ধরার দুমাস পরেই সবজি হিসেবে এগুলো বাজারজাতকরণের জন্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। পাকা খাওয়ার জন্য যখনই পেঁপের গায়ে একটু হলুদ রং দেখা দেয় তখনই সংগ্রহ করা উচিত। ফল ধরার ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত  হয়ে থাকে।


গাছে ৩০-৪০ টি ফল আসার পর আর ফল ধরতে না দিয়ে পরবর্তী ফুলগুলো ভেঙ্গে দিতে হয়। তাহলে শেষ ফলটি ধরার ৬০ দিন পর যদি গাছ থেকে সব ফল সংগ্রহ করা হয় তবে এগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ পাকা ফল হিসেবে বাজারজাত করা যায়। এভাবে ১৪-১৫ মাস পরেই পেঁপে বাগান ভেঙ্গে ফেলা যেতে পারে

ফলন

ফলন
পেঁপের ফলন গাছ প্রতি ১৫-২০ কেজি এবং হেক্টর প্রতি ৩০-৫০ টন হতে পারে। যদিও বর্তমান গড় ফলন টন মাত্র